বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন

তিন শতাধিক এজেন্সি মালিক কুয়ালালামপুরে, এপ্রুভাল কেনায় প্রতারণার শঙ্কা

তিন শতাধিক এজেন্সি মালিক কুয়ালালামপুরে, এপ্রুভাল কেনায় প্রতারণার শঙ্কা

স্বদেশ ডেস্ক:

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জন্য প্রতিযোগিতা করে চাহিদাপত্র কিনতে তিন শতাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক বর্তমানে কুয়ালালামপুরে অবস্থান করছেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব ব্যবসায়ীর মধ্যে অনেকে আছেন যাদের মার্কেটিংয়ের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। তা ছাড়া সময়মতো কর্মী না যেতে পারায় বাংলাদেশের নামে চাহিদাপত্র কম আসছে। এই সুযোগে রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের অনেকে দালালদের মাধ্যমে চাহিদাপত্র কিনে প্রতারিত হতে পারেন, যার প্রভাব আবার বিদেশগামী শ্রমিকদের ওপরও পড়তে পারে বলে মনে করছেন অভিবাসন বিশ্লেষকরা।

তবে বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান নয়া দিগন্তকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী কম যাওয়ার জটিলতার কথা স্বীকার করে বলেছেন, মালয়েশিয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে চাহিদাপত্র যাচাইবাছাই করে দেয়া হলে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না।

মালয়েশিয়ায় তিন সপ্তাহ অবস্থান করে দুই দিন আগে দেশে ফেরা একাধিক প্রতিষ্ঠিত জনশক্তি ব্যবসায়ী রোববার রাতে বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার ঘোষণার পর সময় মতো শ্রমিক না যাওয়ায় অন্য দেশ থেকে মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলো শ্রমিক নিয়ে ফেলেছে। তারা বলেন, মালয়েশিয়া সরকার চার লাখের কিছু বেশি বিদেশী কর্মীর নামে চাহিদাপত্র দিয়েছে। এর মধ্যে নেপাল থেকেই চলে গেছে সোয়া দুই থেকে আড়াই লাখ ডিমান্ড। বাংলাদেশ পেয়েছে সোয়া লাখের মতো। বাকি চাহিদাগুলো ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তানসহ ১৪টি সোর্স কান্ট্রির মধ্যে ভাগাভাগি হয়েছে। ওই হিসাবে বর্তমানে বড় জোর ৩০-৪০ হাজার কর্মীর নামে ডিমান্ড বাজারে থাকতে পারে। এসব কাজের মধ্যে নিম্নমানের কাজই বেশি বলে তাদের ধারণা। তারা বলছেন, এই চাহিদাপত্র কিনতে কুয়ালামাপুরে আমাদের তিন শতাধিক এজেন্সি মালিক এখন মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। তারা দালালদের কাছ থেকে রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে ডিমান্ড কিনছেন।

একজন মালিক বলেন, যে ১০০ এজেন্সি এবার কর্মী পাঠাতে তালিকাভুক্ত হলো তাদের অনেকের মালয়েশিয়ায় ব্যবসা করার অভিজ্ঞতা নেই। তাই আমার কাছে মনে হচ্ছে মালিকদের অনেকে চাহিদাপত্র কিনতে গিয়ে প্রতারিত হতে পারেন। দালালদের টাকা দিয়ে ফতুর হতে পারেন, কারণ বাংলাদেশী দালালরা এক কাজের কাগজ একাধিক জায়গায় বিক্রির চেষ্টা করছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ওই ব্যবসায়ী বলেন, এভাবে প্রতিযোগিতা করে চাহিদাপত্র কেনায় অভিবাসন ব্যয় যেমন বাড়ছে, তেমনি টাকা দিয়ে ফেরত না পাওয়ার ঝুঁকিও বাড়ছে। এরপ্রভাব বিদেশগামী শ্রমিকদের ওপর পড়বে। কারণ এজেন্সির অনেক মালিক কর্মীদের কাছ থেকে আগেই টাকা সংগ্রহ করে চাহিদাপত্র কিনতে মালয়েশিয়ায় কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দিচ্ছে। এসব কারণে মালিকদের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা করছি।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) মহাসচিবের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালয়েশিয়াতে তাদের এমপ্লয়াররা পছন্দমতো দেশ থেকে কর্মী নিয়ে থাকে। বাংলাদেশ তাদের প্রথম পছন্দ। বাংলাদেশ থেকে সময়মতো কর্মী না যাওয়ার কারণে এমপ্লয়াররা এখন সেগুলো ডাইভারট করে নিয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক কম যাওয়ার ব্যাপারে আমরা মনে করি আমাদের ইমিডিয়েট পদক্ষেপ নেয়া উচিত। তিনি বলেন, এখানে কয়েকটা প্রবলেম তারা করে রেখেছেন। এক হলো তারা অটো (স্বয়ংক্রিয়) রোটেশন সিস্টেম করে রেখেছে এফডব্লিউসিএমএস সিস্টেমে, যেটা কোন সোর্স কান্ট্রি দেশের সিস্টেমে নেই। এটা তুলে দেয়া উচিত। সেই সাথে বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সির (বিআরএ) অন্য সদস্যদের এফডব্লিউসিএমএসে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ দেয়া উচিত। এভাবে করলে আমার মনে হয় অল্প সময়ের মধ্যে অনেক শ্রমিক পাঠাতে পারব। এতে কর্মী পাঠানোর হার বাড়ার সাথে সাথে রেমিট্যান্সও বাড়বে।

মালয়েশিয়ায় চাহিদাপত্র কিনে মালিকরা প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিমান্ডটার জন্য একটা সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে, যেটার নাম এফডব্লিউসিএমএস। এই নাম অনেকবার শুনেছেন। ডিমান্ডটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দায়িত্ব মালয়েশিয়া গভর্মেন্টের বা অথরিটির। তারা যদি প্রপারওয়েতে চেক করে জেনুইন ডিমান্ড বা অ্যাপ্রুভাল দেন সেক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা যেমনি প্রতারিত হবেন না তেমনি কর্মীরাও প্রতারিত হবেন না। কিন্তু এটি মালয়েশিয়া সরকারের ওপর ডিপেন্ড করে, তারা যে ডিমান্ডগুলো অ্যালাও করছে সেটি কতখানি জেনুইন সেটি যদি শক্তভাবে নজরদারি করা হয় তাহলে কারোরই প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। সেই সাথে যেসব ব্যবসায়ী বিজনেস প্রকিউর করবেন তাদেরও দায়িত্ব আছে, ডিমান্ড গ্রহণ করার আগে ভালোভাবে সেটি যাচাই-বাছাই করে নেয়ার।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877